ESSAY by BODHISATTYA PAL

ভাষার মৃত্যু এবং মৃত্যু পরবর্তী কান্না
বোধিসত্ত্ব পাল


একটি ভাষা থাকে। সেই ভাষার একটি নির্দিষ্ট 'মা' ডাক থাকে। গাছেদের থাকে নির্দিষ্ট নাম, একটি পৃথক নাম থাকে পৃথিবীর। 

তারপর একদিন ভাষাটির মৃত্যু ঘটে। সাথে মৃত্যু হয় এক মায়ের, কিছু গাছের, একটি সভ্যতার, একটি পৃথিবীর। এ মৃত্যু অন্যরকম। থাকে না কোন শোকসভা, হয় না কোন শেষকৃত্য। থাকার মধ্যে থাকে কেবল একটা না থাকা, আর একটা ভাষাহীণ ক্রন্দন।

'ভাষার মৃত্যু '- আমাদের সচরাচর শোনা শব্দের মধ্যে পড়ে না। তাই এ বিষয়ে অগ্রসর হওয়ার আগে আমাদের জানা উচিত কী এই ভাষার মৃত্যু আর এর কারনই বা কী?

ভাষাতত্ত্বের সরলীকৃত ব্যাখ্যা অনুযায়ী বলা যায়,‌ কোন একটি ভাষার শেষ বক্তা যখন মারা যায় তখন উক্ত ভাষাটিরও মৃত্যু  ঘটে। যদিও জীবনের কোন স্তরে ভাষাটির অস্তিত্ব থাকলেও থাকতে পারে। সেই নূন্যতম অস্তিত্বও যখন বিনষ্ট হয় তখন ঘটে ভাষার বিলুপ্তি। এর কারন ও প্রকারের আলোচনায় আসলে দেখা যায় তা যথেষ্ট বহুমুখী ও বহুমাত্রিক। তাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সাধারন কারন এইরূপ -
1. Gradual Death বা ক্রমান্বয়িক মৃত্যু: সবচেয়ে সাধারন কারন। একটি 'অধিক প্রকট' বা 'সুপিরিয়র' বা 'প্রেস্টিজিয়াস' ভাষার সাথে সহাবস্থানে 'দুর্বল' ভাষার বক্তার পরিমাণ প্রতি প্রজন্মে কমতে থাকে। একসময় শেষ বক্তার ও মৃত্যু ঘটে। 
উদাহরণস্বরূপ আমরা আঠারো শতক ব্রিটেনে 'কর্নিস' ভাষার মৃত্যুকে বলতে পারি।
2. Bottom to Top Language Death: ভাষামৃত্যুর এই বিশেষ প্রকারে দেখা যায় 'Formal Context' এ ভাষার মৃত্যু ঘটা সত্ত্বেও 'Specific Context' যেমন - 'Liturgical Language' হিসেবে এটি থেকে যায়। 
উদাহরণের কথা বললে সবচেয়ে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত 'Latin'.
3. Sudden Language Death: কোন একটি পুঞ্জীভূত  ভাষাভাষী এলাকায়  অধিবাসীদের হঠাৎ মৃত্যু (মড়ক বা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই  বিদেশী শক্তির আক্রমণ)  একটি ভাষাকে চিরতরে শেষ করে দেয়।
'তাসমানিয়ান' ভাষার
মৃত্যু এর উদাহরণ। এছাড়া ইনফ্লুয়েঞ্জার দরুন ব্রাজিলের 'Trumai' ভাষার মৃত্যুও এই একই কারনে।
4.Radical Language Death: আকস্মিকতার দিক থেকে আগেরটির সাথে অভিন্ন হলেও এর বিশেষত্ব হলো মৃত্যু নয়, বরঞ্চ স্বেচ্ছায় একটি ভাষাগোষ্ঠী একটি ভাষা পরিত্যাগ  করে। কারন হিসেবে থাকে রাজনৈতিক  অবদমন এমন কী 'Genocide'. অনেক  সময়  নিজেদের দেশজ পরিচয়  লুকোতে তারা ভাষা পরিত্যাগ করে।
1932 সালে EL Salvador এ পঁচিশ হাজার কৃষক খুনের পর অধিবাসীরা 'Lenka' ও 'Cacaopra' ভাষা বলা ছেড়ে দেয়। 

অর্থনৈতিক, সামাজিক ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুবিধার জন্য বিভিন্ন ভাষার গোষ্ঠীর 'দ্বিতীয় ভাষার' দিকে যে ঝোঁক তারই পরবর্তী প্রজন্মে জৈব বিবর্ধন  ঘটে। নতুন প্রজন্ম ধীরে ধীরে প্রথম ভাষাকে পরিত্যাগ করে ও তার মৃত্যু সুনিশ্চিত করে। এটাই ভাষা মৃত্যুর সবচেয়ে  সাধারণ প্রক্রিয়া। 

তবে ভাষা মৃত্যুর সবচেয়ে  নৃশংস, লজ্জাজনক ও ঘৃণ্য  ঘটনা হলো - 'Linguicism' বা 'Glottophobia'. সহজ কথায়  একটি মানুষের শুধুমাত্র  ভাষার দ্বারাই তার আর্থ-সামাজিক স্থিতি ও শিক্ষার বিচার করা ও তাচ্ছিল্য করা। অত্যাচার, হিংস্রতা ও কখনো কখনো  গণহত্যার মাধ্যমে স্থানীয়  ভাষাকে দমন করা হয়।  চাপিয়ে দেওয়া হয় একটি প্রকট ভাষা। 
এর উদাহরণের কোন অভাব নেই। কর্ণওয়েল কতৃক আয়ারল্যান্ড অধিগ্রহণ, দীর্ঘদিন ব্রিটিশ শাসন ও আইরিশ দুর্ভিক্ষ অচিরেই আইরিশকে গৌন ভাষায় পরিণত করে। তুর্কীতে কুর্দিস নিষেধাজ্ঞাও এর উদাহরণ। 1983 সালের জুলাই মাসে শ্রীলংকায় তামিল দমন যা রক্তাক্ত 'Black July'‌ নামে খ্যাত, 'Linguicism' এর ভয়াবহতাকে তুলে ধরে।

এই ঘটনা অত্যন্ত  নিন্দনীয় হলেও এর উদাহরণ আঞ্চলিক থেকে আন্তর্জাতিক, সামান্য থেকে ব্যাপক সব স্তরেই প্রতিনিয়ত পাওয়া যায়। 'Linguicism' কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা  নয়। বরং আজন্ম চলা পৃথিবী ব্যাপী বর্ণবৈষম্যেরই রূপভেদ মাত্র।

তবে এই যে ঘটনা এর তাৎপর্য কী? এটা নিয়ে আমাদের ভাবনা কী যুক্তিযুক্ত? এর কী কোন সুদূরপ্রসারী ফল আছে নাকি যেমন চলছে ঠিকই আছে? 

প্রতি দুসপ্তাহে আমাদের এই শব্দময় গ্রহ থেকে বিদায় নেয় একটি করে ভাষা। গবেষণা বলছে, বর্তমানে স্থায়ী সাত হাজারটি ভাষার 90% এই শতকের শেষে চিরবিদায় নেবে; থেকে যাবে কয়েকটি প্রকট আগ্রাসী ভাষা। অনেকের মতে, এ ঘটনা নেহাৎ মন্দ নয়। ভাষার একীকরণের প্রচেষ্টা বহু বছর ধরে বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন  কারণে, বিভিন্ন তাগিদে হয়ে আসছে। এতে বাড়ে
সামাজিক একাত্মতা, কমে ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা, তৈরী হয় বিশ্বজনীন মানবতাবাদ।তবে সমস্যা কোথায়?

সত্যিই! সমস্যা  কোথায়? আর এই প্রশ্ন থেকেই জন্ম নেয় এক 'Paradox', উঠে আসে আরো কয়েকটি  দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক ও মনোস্তাত্ত্বিক প্রশ্ন। তৈরী হয় এক 'Ethical Dillema'. একটু ভাবুন, এ শুধু কিছু ভাষা ও সেই ভাষায় কথা বলা কিছু সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মৃত্যু নয়।তার সাথে হারিয়ে যায় তাদের সমগ্র জীবন গাঁথা - তাদের সাহিত্য, শিল্প, সংগীত, চিত্রকলা, আচার অনুষ্ঠান, সর্বোপরি তাদের সভ্যতা।

বলিভিয়ার traditional চিকিৎসা পদ্ধতির সাথে জড়িত একটা জনগোষ্ঠী 'Kallwaya' ভাষা শেখে তাদের পূর্বসূরিদের চিকিৎসাবিদ্যা সংক্রান্ত বই পড়ার জন্য ও কয়েক হাজার  গোপন ওষুধের নাম জানার জন্য। ঘটনা চক্রে 'Kallwaya' এর মৃত্যুর  সাথে সাথে হারিয়ে যাবে এই চিকিৎসা পদ্ধতি ও তার সঙ্গে জড়িত  অসংখ্য  মানব‌ সম্পদ।

সারা বিশ্বের আনাচে কানাচে  লুকিয়ে রয়েছে কয়েকটা বেদনাদায়ক গল্প, জেগে রয়েছে কয়েকটা স্বপ্নহীন চোখ- তারা হলো কোন এক ভাষায় কথা বলা শেষ প্রতিনিধিরা। তারা জানে, তাদের মৃত্যুর সাথে সাথে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে আরো একটি ভাষা- নিস্তব্ধে। হয়তো বহুযুগ ধরে তারা মাতৃভাষায় কথা বলেনি। বাধ্য হয়ে শিখেছে কোন অজানা ভাষা- আধোআধো। দিদিমার থেকে শোনা সমস্ত প্রাচীন উপকথা, রূপকথা, স্বাধীনতার গল্প, স্বদেশের গল্প, স্বজনের গল্প‌- এর একলা মালিক সে।ক্ষয়িষ্ণু নীহারিকার একলা তারা সে। যেন একটাই কাজ শুধু  তার- অপেক্ষা  করা, আর একদিন ঝরে পড়া। 

ভয় পাচ্ছেন? না না- আমাদের বাংলা ভাষা এ সংকটের ধারে পাশে নেই।বিশ্বের সর্বাপেক্ষা বেশী  ব্যবহারের নিরিখে পঞ্চম  বাংলা।

তবু যেভাবে মহাপ্রলয়ের সূচনা হয় একফোঁটা বৃষ্টি দিয়ে সেভাবেই বর্তমানের কোন এক প্রবনতা অজান্তেই আসন্ন ভবিষ্যতে আমাদের  এক মহাসংকটের দোরগোড়ায় দাঁড় করিয়ে  দেবেনা তো? বলতে দ্বিধা নেই, বিশ্ব সাহিত্যের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ভাষার অন্যতম বাংলা তার স্বতন্ত্রতার স্পর্দ্ধা নিয়ে এই সম্ভাবনা থেকে বহুক্রোশ দূরে দাঁড়িয়ে  আছে।

ইংরেজি  মিডিয়ামে সন্তানকে পড়ানোর মতো 'মেট্রোপলিটন প্রবনতা' কতটা যুক্তিযুক্ত এবং সেই সন্তান ইংরেজিতে কতটা সুদক্ষ ও জ্ঞানী হয়ে ওঠে সেই সুদীর্ঘ তর্কে যাবার অবকাশ  ও মানসিকতা কোনটাই আমাদের নেই। 

তবু ইংরেজি  মিডিয়ামে পড়িয়ে সমাজের এক ধাপ উঁচুতে আসীন হবার এই যে প্রবনতা, তারপর সেই সব 'পাশ্চাত্য ভাষাধর্মী' 'বাঙালি' ছাত্রছাত্রীদের 'বাংলাটা ঠিক আসে না..!' বলার প্রবনতা ও আরো বহুমুখী সব প্রবনতা (যেগুলি উল্লেখ করে আমি কোন মেট্রোপলিটন ক্ষোভের শিকার  হতে চাই না)  আমাদের কোনদিন বিপদে ফেলবেনা তো? সময়ই জানে। 

তবে শিল্প চয়নের ক্ষেত্রে  ব্যাপারটা ভিন্ন। কোন ভাষা নিয়ে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও তাই। শিল্পের কোন ভাষা থাকে না। সংগীত, চলচ্চিত্র, সাহিত্য ও শিল্পের অন্যান্য সমস্ত রকম প্রকারে বিদেশী ভাষার শরণাপন্ন হওয়া উক্ত ব্যক্তির শিল্পের প্রতি প্রবল টানেরই প্রদর্শন। তবে তার  সঙ্গে অবশ্যই দেশীয় ভাষার শিল্পকেও সমান গুরুত্ব  দেওয়া প্রয়োজন এবং যুক্তিযুক্ত তুলনা ও সমালোচনা প্রশংসাযোগ্য।

যাই হোক, এতো গেল বিপদসীমার বাইরে থাকা বাংলা ভাষা আমাদের। কিন্তু আমরা যদি আমাদের  গ্ৰামগঞ্জের বিভিন্ন আদিবাসী ভাষাগোষ্ঠীর কথা ভাবি সেখানে কিন্তু পরিস্থিতি সংকটজনক। সেখানে শত্রু  ইংরেজি বা তথাকথিত prestigious ভাষা গুলি নয়, বরঞ্চ বাংলাই। এই যে একই ভাষার Transition, কখনো 'Superior' কখনো 'Inferior'  এর কোন বিন্যাস কোথাও করা নেই। এই অদৃশ্য  বিভাজন আমাদের মনে। সে কথা বিশদে বলতে গেলে আলোচনার দিক পালটে যায়। 

যাই হোক, Economy ও Social Priorities র জন্য এই আদিবাসী ভাষাগোষ্ঠীর মানুষেরা তাদের প্রথম ভাষার পরিবর্তে বাংলাকে গুরুত্ব দিচ্ছে বেশী এবং নতুন প্রজন্মকেও বাংলা শেখানোতে জোর দিচ্ছে। 
উদাহরণ স্বরূপ 'অলচিকি'।  যদিও বহু আদিবাসী ভাইবোনের মাতৃভাষাতেই উচ্চশিক্ষা লাভ করছে, সাথে সরকারও এই ভাষার  উন্নতিতে সচেষ্ট,  তবু ও ঐ যে বললাম 'প্রবনতা'। এই সব ভাষার ক্ষেত্রে এই প্রবনতা আরো ক্ষতিকারক। তবে উপায়  কী?

এই যে কমবেশী বিপদ সীমার বাইরে থাকা যে সব ভাষা, এগুলির গতি প্রকৃতি ভবিষ্যতে কী হবে তা নিশ্চিত নয়। মানুষের second language এর প্রতি ঝোঁককেও হঠাৎ পালটানো সম্ভব নয়, আর পাল্টানো যাবেও না। যে জায়গায়  কিছু ভাবা উচিৎ সর্বোপরি ভাবা সম্ভব তা হলো বিপদজনক ভাষাগুলি, অনেক সময় ইতিমধ্যে লুপ্ত ভাষাগুলি নিয়ে।

প্রতিনিয়ত বেড়েই চলা এই ভাষামৃত্যু রুখতে সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন উদ্যোগ গত দশ বছরে গৃহীত হয়েছে। প্রচুর সংস্থা গড়ে উঠেছে যেগুলি এই সব ভাষা সংরক্ষণের কাজে নিয়োজিত। যেমন- Native American Language Institution, The Rama Language Project in Nicaragua, Mayan Institution in Guatemala প্রভৃতি। প্রচুর ভাষাবিদ, ঐতিহাসিক ও বৈজ্ঞানিক মিলে নিরলস প্রচেষ্টা করে চলেছেন এই ভাষাগুলির প্রকৃতি বুঝতে, বিভিন্ন ভাষাগোষ্ঠীর সাথে যোগাযোগ করতে, ভাষার মৃত্যু রুখতে, মৃত্যুর গতি কমাতে, ভিডিও, অডিও ও অন্যান্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তির দ্বারা ভাষাগুলির Physical Presarvation করতে।

এই ভাষামৃত্যু রোখার কোন সার্বজনীন পদ্ধতি বর্ণনা করা অর্থহীন। কেননা প্রত্যেকটা বিপদমুখী ভাষার গঠনপ্রকৃতি, তার বিপদের কারন, প্রেক্ষাপট বিভিন্ন রকম। কিছু ভাষার এখনো কোন লিখিত রূপ নেই। মৃত্যমুখী এইসব ভাষার আংশিক সংরক্ষণ সম্ভব হলেও তাকে পুনরায় জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছড়িয়ে  দেওয়া বা বক্তার সংখ্যা  বাড়ানো প্রায় অসম্ভব। তবু কিছু factor আছে যা সম্ভবত এই মৃত্যু রোধ করলেও করতে পারে - 
1. প্রথমত এবং সর্বাপেক্ষা যা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো ঐ ভাষাগোষ্ঠীকে আগে নিজে বুঝতে হবে এই সংরক্ষণের  গুরুত্ব। আমাদের উৎসাহ না হলে সম্পূর্ণ গুরুত্বহীন ও বিপরীত প্রভাব ফেলতে পারে। 
2. প্রত্যেককে এটাও বুঝতে হবে যে 'অধিক সম্ভ্রান্ত' বা 'নিম্ন বর্গীয়' বলে কোন পরিভাষা ভাষাবিদ্যয় নেই। কোন প্রকট জাতি বা সংস্থাকে উদ্যোগী হতে হবে এই ধারণা বহনের জন্য। 
3. সরকারী ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সাহায্য প্রয়োজন। উৎসাহীদের সঠিক শিক্ষার জন্য প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে দ্বীপে ঐ ভাষার বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে, Primary ও Secondary দুই পর্যায়েই। Bi-lingual ও Bi-cultural বিদ্যালয়ের দিকে বেশী গুরুত্ব দিতে হবে। সঙ্গে চাই প্রকৃত প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী।
4. উক্ত ভাষা শিখতে আরো উৎসাহের জন্য ঐ ভাষায় শিক্ষিত ছাত্রছাত্রীদের জন্য  চাকরীর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট  সংরক্ষণ থাকতে হবে।
5. প্রচারের সীমা একেবারে  প্রথম স্তর থেকে করতে হবে। আঞ্চলিক বাজারে, শিল্পে এই ভাষার ব্যবহার অধিক করতে হবে। 
6. যে সব ভাষার লিখিত রূপ নেই তার লিখিত রূপ তৈরি  করতে হবে এবং প্রাথমিক স্তরে মাতৃভাষা শিক্ষা  বাধ্যতামূলক করতে হবে।

'Bottom to Top Language  Death' হবার সমুহ সম্ভাবনা যুক্ত সংস্কৃতকে পুনরুদ্ধারের  উদাহরন অনেকটা আশাপ্রদ। 2001 সালের জনগণনা অনুযায়ী ভারতের 14135 জন মানুষের মাতৃভাষা ছিল সংস্কৃত, 2011 সালের জনগণনায় এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় 24821 এ। মোট 2360821 জন সংস্কৃত বক্তা ভারতে বাস করেন। এমনকি সম্পূর্ণ সংস্কৃত ভাষাভাষীর কয়েকটি গ্রামও উপস্থিত, কর্ণাটকের মাত্তর ও হোসাহালি, মধ্যপ্রদেশের ঝিরি উল্লেখযোগ্য।

তবে একেবারে শূণ্য বক্তা বিশিষ্ট ভাষাকে পুনরায়  সগৌরবে ফিরিয়ে আনার অভূতপূর্ব উদাহরণ একমাত্র 'হিব্রু' তে পাওয়া যায়। উনবিংশ ও বিংশ শতকের সন্ধিক্ষণে যখন প্যালেস্টাইনে জিয়ুসরা এসে বসবাস করতে শুরু করে তখনই তারা 'Judaism' এর পবিত্র ভাষা হিব্রুকে কথ্য ও লিখিত ভাষায় পরিনত করে। পরে স্বাধীন ইজরায়েল হিব্রুকে জাতীয় ভাষা ঘোষণা করে। বর্তমানে হিব্রু বক্তার সংখ্যা প্রায় পাঁচ মিলিয়ন।
পৃথিবীর ইতিহাসে এই হিব্রু পুনরুদ্ধার একটি নজির বিহীন model হিসেবে  রয়ে যাবে। বর্তমানে আইরিশ ওয়েলিশ, হাওয়াইয়ান, নাভাজো প্রভৃতি ভাষার পুনরুদ্ধার কিছুটা সফলতার  মুখ দেখছে।

.............কিংবা আমরা হয়তো ব্যর্থ হবো অথবা সফলও বলতে পারেন। ভাষা বিভাজন ভুলে সবাই কথা বলবো একই ভাষাতে; ভাষা সাম্যতা - উন্নত পৃথিবীর লক্ষ্যে। তারপর  আরো উন্নতি আসবে, হয়তো আসবে এমন কোন প্রযুক্তি, এমন যুগান্তকারী প্রযুক্তি যাতে আর কথাই বলতে হবে না আমাদের, প্রয়োজন হবে না আর কোন ভাষার। শব্দচয়ন, ব্যাকরণগত সুস্থিতির পর বাক্য ছোঁড়ার আগেই বুঝে যাবো প্রত্যেকে প্রত্যেকের কথা। যে কোন ভাষার বই পড়তে হয়তো প্রয়োজন হবে একটা ক্লিকের।থাকবে না কোন ভাষাগত দূরত্ব, থাকবে শুধু অফুরন্ত সময়। আর এই সময়ে চেপে একদিন লুপ্ত হবে মানব জীবন, মানব যাপন। মানব পরবর্তী কোন বুদ্ধিদৃপ্ত জীব হয়তো কখনো মানুষের অবলুপ্তির কারন বিশ্লেষণে মগ্ন থাকবে। যখন তাদের মধ্যে কেউ কোন এক দুর্বোধ্য ভাষায় বলে উঠবে - 'মানুষ বোধহয় হারিয়ে ফেলেছিল ভাষা', ঠিক তখনই মিথ্যে হয়ে যাবে মানব ভাষার ইতিহাস, চিরশান্ত হবে সেই ভাষাহীন ক্রন্দন। অট্টহাস্য করে উঠবে তারা, কানফাটা চিৎকারে।....শুনতে পাচ্ছেন?....

ABOUT ME:

সাহিত্য, সঙ্গীত, কবিতা, চলচ্চিত্র, পড়াশোনা, লেখালেখি - এই নিয়েই জীবন। আপাতত আর কিছু বলার নেই। তবে একদিন বলবো সবটাই।

Comments

  1. বেশ‌ তথ্যসমৃদ্ধ লেখা।সমাধানের পথগুলি বাতলে দেওয়া...তবে ব্রিটিশ কলোনিয়াজমের জন্য যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রচুর ভাষা তা বলাই বাহুল্য। Ngua ö Thuong ও তা বহুবার বলেছেন ।

    ভাল লাগল বেশ আলোচনা,সহজবোধ্য এবং স্বতস্ফূর্ত

    ReplyDelete
    Replies
    1. অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা🙏

      Delete
  2. বেশ তথ্যসমৃদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষণ।
    সমৃদ্ধ হলাম।

    ReplyDelete
    Replies
    1. অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা🙏

      Delete
  3. অসাধারণ তথ্যসমৃদ্ধ লেখা । সেইসাথে সুনিপুণ ভাষাশৈলী , শব্দ চয়নে অসামান্য দক্ষতার এক পরিপূর্ণ প্রকাশ এই লেখা । ঋদ্ধ হলাম এই দুর্দান্ত বিশ্লেষণধর্মী লেখাটি পড়ে ....বোধিসত্ত্ব ।।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

POETRY by SOURAV BARDHAN

POETRY by ATANU PRAMANIK